Press ESC to close

সফল মানুষের দৈনন্দিন অভ্যাস: যা বদলে দিবে আপনার জীবন

সফলতা আমাদের সবার জীবনেই কাম্য। তবে, তা কখনোই রাতারাতি আসে না। সফলতা একটি জার্নি, যেখানে সবথেকে বেশি প্রয়োজন বিরামহীন প্রচেষ্টা, সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি, এবং কিছু বিশেষ রুটিন মেইনটেইন করা। সফল মানুষদের জীবনের দিকে তাকালে ও আমরা দেখি যে, তাদের লাইফস্টাইল ও দৈনন্দিন অভ্যাসে তারা সবসময়  কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ফলো করে থাকে যা তাদেরকে অন্যদের চেয়ে সবসময়-ই এগিয়ে রাখে। পরবর্তীতে এই রুটিন-ই একটা সময় তাদের লাইফস্টাইলে রূপান্তরিত হয়।

সফল মানুষেরা আসলে লিমিটেড কোনো কিছুর মধ্যেই নিজেদের আটকিয়ে রাখেন না; তারা তাদের জীবনের প্রতিটি দিককেই সচেতনভাবে ব্যালেন্স করে থাকে। তারা সবথেকে বেশি এফোর্ট দেন নিজেদের সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে। কারন সময় মূলত সবার জন্য ই ২৪ ঘন্টা, কিন্তু এই ২৪ ঘণ্টাকেই তারা এমনভাবে ইউটিলাইজ করে যা তাদেরকে অন্যদের  চেয়ে অনেক এগিয়ে রাখে। সফল মানুষদের দৈনন্দিন এই অভ্যাসগুলো থেকে আমাদের ও অনেক কিছু শেখার আছে। তাদের এই দৈনিন্দিন অভ্যাসগুলো রপ্ত করে আমরা ও আমাদের জীবনকে আরো অর্থবহ ও সফল করে তুলতে পারি।

তাহলে চলুন জেনে নিই, সফল মানুষদের  সেই বিশেষ অভ্যাসগুলো কী কী?  যেগুলো তারা দৈনিক রুটিন হিসেবে ফলো করে থাকে  এবং এগুলোকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে আমরা ও জীবনে সফল হতে পারি।

 

১. সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করুন

সফলতার প্রথম শর্ত ই হল-সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করা। আমরা বেশিরভাগ মানুষ ই সফল হতে চাই কিন্তু কি করে কিভাবে সফল হতে চাই সেসম্পর্কে সুনির্দিষ্ট জ্ঞান থাকে না। প্রকৃতপক্ষে  আমাদের কাছে আমাদের জীবনের চাওয়া গুলো  ক্লিয়ার থাকে না। এবং কেন চাই সেটাও আমরা ও জানিনা।  তাই অনেক সময় ই আমরা মাঝপথে গিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পড়ি। 

কিন্তু সফল মানুষরা সবসময় একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে কাজ করেন। তাদের ভিশিন এন্ড মিশন একেবারে ক্লিয়ার থাকে, যা তাদের লক্ষ্যের পানে অটল রাখতে সাহায্য করে। যে কারণে তাদের জীবনে একটি স্পষ্ট গন্তব্য থাকে এবং তাই সহজাতভাবেই কাজের প্রতি তাদের অনুপ্রেরণা থাকে অন্যরকম লেভেলের। তাই এখনি নিজেকে কয়েকটি প্রশ্ন করুন- আমি কি চাই জীবনে? আর কেন চাই? আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমাকে কী কী করতে হবে?

এবং কাগজে-কলমে সবগুলো টপিক লিখেলিখে নিজের লক্ষ্যকে নিজের কাছে স্বচ্ছ করুন; যা আপনাকে আপনার জীবনে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।  

২. সকালে তাড়াতাড়ি উঠুন

বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের ইংরেজি তে একটা প্রবাদ আছে Early to bed and early to rise, makes a man healthy, wealthy, and wise”. সফল মানুষরা বেশিরভাগ সময়ই ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন। প্রোডাক্টিভ ওয়েতে কাজ করার জন্য সকালের সময়টা অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেস্ট। এই সময়টা ব্যবহার করে আপনি নিজের জন্য কিছুক্ষণ সময় বের করতে পারেন—যেমন মেডিটেশন, শরীরচর্চা, বা দিনের কাজের পরিকল্পনা। এক্ষেত্রে মেডিটেশন আপনার মাইন্ড বুস্টার হিসেবে কাজ করতে পারে এবং তাতে আপনার সারাদিনের প্রোডাক্টিভিটি আরো কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। তাই কষ্ট হলেও সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করা উচিৎ যাতে আপনি সারাদিনকে প্রোডাক্টীভ ওয়েতে কাজে লাগাতে পারেন। 

সফল মানুষের দৈনন্দিন অভ্যাস: যা বদলে দিবে আপনার জীবন
৩. সবসময় কৃতজ্ঞ থাকুন 

কৃতজ্ঞতা আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন প্র্যাকটিসের মধ্যে একটি হওয়া উচিৎ। আসলে সফল মানুষদের জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে তারা জীবনের সর্বাবস্থায় শোকর গোজার ছিলেন। কারন বিশ্লেষণ করতে চাইলে দেখবেন যে যতো বড় মানুষ সে তত বেশি বিনয়ী। তাই জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকুন, কৃতজ্ঞ থাকুন আপনার জীবনে এক বিন্দু পরিমাণ উপকারে আসা মানুষদের প্রতি। আর কৃতজ্ঞতার এই চর্চা করলে দেখবেন আপনার জীবনে অদ্ভুত শান্তি বিরাজ করবে, যা আপনাকে আপনার লক্ষ্য পানে আরো সুস্থিরভাবে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। তাই প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই বলুন “শোকর আলহামদুলিল্লাহ, হে প্রভু ধন্যবাদ তোমাকে নতুন আরেকটি দিনের জন্য।'”

৪. ডেইলি রুটিন ফলো করুন 

সফল মানুষেরা দিন শুরু করার আগে তাদের কাজের একটি তালিকা তৈরি করেন। এতে তারা দিনের কাজগুলোকে প্রায়োরিটির ভিত্তিতে সময় দিতে পারেন এবং জরুরি কাজগুলো সময়মতো সম্পন্ন করতে সক্ষম হন। রুটিন তৈরি করার সবচেয়ে ভালো দিক হল কাজের ক্ষেত্রে আপনার ফোকাস বজায় রাখতে সহায়তা করবে। রুটিন বলতে আমরা স্ট্রিক্টলি টাইম মেনে কিছু নিয়ম ফলো করাকেই বুঝি। কিন্তু এটাকে সহজ করে  আপনি আপনার সময় আর কাজকে রুটিনে ভাগ না করে আপনি আপনার কাজকে মেইন ফোকাসে রেখে একটা রুটিনের আওতায় নিয়ে আসতে পারেন, যাতে করে সময়ের প্রেশার আপনার মাথায় কম থাকবে এবং দিনের মধ্যে কাজগুলো কমপ্লিট করার একটা তাড়না আপনি বোধ করবেন। এবং দিনশেষে ৬০-৭০% কাজ করতে আপনি ইজিলি সক্ষম হবেন।   

৫. নিয়মিত পড়াশোনা করুন

পড়াশোনা বলতে আমরা কেবল একাডেমিক পড়াশোনাকেই বুঝি কিন্তু আদতে পড়াশোনা দিয়ে সমগ্র জ্ঞান অর্জনের পথটিকেই বোঝানো হয়।সফল মানুষরা জীবনের প্রতিটি দিন নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করেন। আর জ্ঞান বাড়ানোর সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম হিসেবে তারা নিয়মিত বই পড়েন। এটি তাদের জ্ঞানের পরিধিকে আরো  বিস্তৃত করে, এবং জীবন সম্পর্কে  বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এনে দেয়। আর জীবন সম্পর্কে জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর জন্য তারা সেলফ ডেভেলপমেন্ট বই, আত্মজীবনী, বা শিল্পসংক্রান্ত বই ফার্স্ট প্রায়োরিটির তালিকায় থাকে সবসময়। 

৬. সবসময় ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করুন

যেকোন পরিস্থিতে স্থির থাকতে পারা একজন মানুষের মানসিক সক্ষমতার মাপকাঠি হিসেবে মনে করা হয়। আর সব পরিস্থিতে স্থির থাকার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সবসময় ইতিবাচক বা পজিটিভ চিন্তা করা। সফল মানুষরা যেকোন খারাপ পরিস্থিতিতে ও  হতাশ না হয়ে ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখেন। কারন সমস্যার মধ্যে টেনশন করলে কিংবা নেতিবাচক চিন্তা করলে মানুষ সমস্যাতেই নিমজ্জিত হয়ে থাকে। কিন্তু আপনি যদি সর্বদা পজেটিভ চিন্তা অর্থাৎ ইতিবাচক চিন্তা করতে পারেন তাহলে যেকোণ পরিস্থিতেকেই আপনি আপনার অনুকূলে নিয়ে আসতে পারবেন। এজন্য সবসময় ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করুন। কারন ইতিবাচক থাকতে প্যারাটা মূলত একটা লাইফস্টাইল। 

৮. নিজের উপর আত্মবিশ্বাস বজায় রাখুন

সফল মানুষরা সবসময় নিজেদের উপর আত্মবিশ্বাস রাখেন। তারা জানেন যে কঠোর পরিশ্রম এবং ধৈর্য তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে। ব্যর্থতার মুখোমুখি হলেও তারা হাল ছাড়েন না, বরং নতুন উদ্যমে আবার চেষ্টা করেন। তাই সবসময় নিজের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখুন। এবং নিজের উপর বিশ্বাস স্থাপন করুন যে আপনিও পারবেন। 

সর্বোপরি, মনে রাখবেন, “ ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল। ছোট ছোট পরিবর্তনই জীবনে বড় সফলতার কারণ হতে পারে। তাই প্রতিদিন একটু একটু করে এগিয়ে চলুন, সাফল্য আপনার দোরগোড়ায় অপেক্ষা করছে। সাফল্য আপনার পদচুম্বন করবেই। 

Masfika Maria

আমি মারিয়া, ৬ বছর ধরে লেখালেখি করছি। বর্তমানে বাংলায় অনার্স করছি এবং আমার প্রিয় ওয়েবসাইট 'বাংলায় শিখুন' এর মাধ্যমে সহজ ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেয়ার করি। আমার উদ্দেশ্য হলো জটিল বিষয়গুলোকে সহজভাবে উপস্থাপন করা, যাতে সবাই আনন্দ নিয়ে শিখতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *