
বাংলাদেশের অনেক মানুষই এখন ডিজিটাল অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সার, আইটি পেশাজীবী এবং অনলাইন উদ্যোক্তাদের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের দেশে প্রায়ই নিরাপত্তার অজুহাতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়, যার ফলে হাজার হাজার ফ্রিল্যান্সার ও আইটি ব্যবসায়ী বিপাকে পড়েন। পাশাপাশি, দেশের অনেক অঞ্চল—যেমন পাহাড়, হাওড়-বাঁওড়, দ্বীপ ও নদীবেষ্টিত এলাকা—যেখানে ব্রডব্যান্ড বা মোবাইল ইন্টারনেট কার্যকরভাবে কাজ করে না।
এই সমস্যাগুলোর সমাধান হতে পারে স্টারলিংক, যা এলন মাস্কের স্পেসএক্স কোম্পানির একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট প্রকল্প। এটি সারা পৃথিবীর যেকোনো স্থানে, এমনকি দুর্গম এলাকাতেও উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা দিতে সক্ষম। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যখন মোবাইল টাওয়ার অকেজো হয়ে যায়, তখনও স্টারলিংক সচল থাকে। তাই, বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ এখনো একটি চ্যালেঞ্জ, সেখানে স্টারলিংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
স্টারলিংক কী?
স্টারলিংক হলো স্পেসএক্সের তৈরি একটি স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রকল্প, যা কম খরচে ও উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করছে। এটি ২০১৫ সালে স্পেসএক্সের গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে শুরু হয় এবং ২০১৯ সালে প্রথম পরীক্ষামূলক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়। স্টারলিংকের মালিকানা স্পেসএক্স কোম্পানির হাতে রয়েছে, যা এলন মাস্কের মালিকানাধীন একটি বেসরকারি মহাকাশ সংস্থা। বর্তমানে এটি পৃথিবীর নিম্ন-কক্ষপথে (Low Earth Orbit – LEO) প্রায় ৫,০০০+ ছোট স্যাটেলাইট স্থাপন করে ইন্টারনেট সংযোগ সরবরাহ করছে, এবং এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।
অন্যান্য প্রচলিত ইন্টারনেট সংযোগ যেমন মোবাইল নেটওয়ার্ক বা ফাইবার অপটিক ক্যাবলের পরিবর্তে, স্টারলিংক সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে ইন্টারনেট সরবরাহ করে, যার ফলে দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সহজেই ইন্টারনেট পৌঁছানো সম্ভব।
স্টারলিংকের লক্ষ্য হলো এমন একটি বিশ্ব গড়ে তোলা, যেখানে যেকোনো স্থানে দ্রুতগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এটি বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল, পাহাড়ি এলাকা এবং সমুদ্র অঞ্চলের জন্য কার্যকর হতে পারে।

স্টারলিংক কীভাবে কাজ করে?
বাংলাদেশে ফাইবার অপটিক ক্যাবল বা মোবাইল নেটওয়ার্ক নির্ভর ইন্টারনেট ব্যবস্থায় বড় একটি সীমাবদ্ধতা হলো—নিরাপত্তার অজুহাতে সরকার প্রায়ই ইন্টারনেট সেবা সীমিত বা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এর ফলে ফ্রিল্যান্সার, আইটি পেশাজীবী এবং অনলাইন ব্যবসায়ীরা বড় সমস্যায় পড়েন। কিন্তু স্টারলিংক ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা হবে না, কারণ এটি সরাসরি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংযোগ প্রদান করে, যা স্থানীয় নেটওয়ার্ক অবকাঠামোর ওপর নির্ভরশীল নয়।
এছাড়াও, বাংলাদেশে পাহাড়, নদী, সমুদ্র, হাওড়-বাঁওড় এবং দুর্গম এলাকা রয়েছে, যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক পৌঁছাতে পারে না বা দুর্বল থাকে। স্টারলিংক এই ধরনের ভূপ্রকৃতিতে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে, কারণ এটি সারা পৃথিবীর যেকোনো স্থানে ইন্টারনেট সংযোগ সরবরাহ করতে সক্ষম।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যেমন ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বা ভূমিকম্পের সময় স্টারলিংক একটি নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগ দিতে পারে, যখন প্রচলিত মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ব্রডব্যান্ড সেবা সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
স্টারলিংকের মূল কাজের প্রক্রিয়া সহজ কিন্তু অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি। এর মূল কাজ করার ধাপগুলো হলো:
- স্টারলিংক হাজার হাজার ছোট স্যাটেলাইট পৃথিবীর ৫৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় স্থাপন করেছে। এই স্যাটেলাইটগুলো একে অপরের সঙ্গে লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে এবং গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে সংকেত গ্রহণ করে ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে।
- ব্যবহারকারীদের বাসায় একটি স্টারলিংক কিট (ডিশ অ্যান্টেনা ও রাউটার) বসাতে হয়। এটি স্যাটেলাইট থেকে সরাসরি সংকেত গ্রহণ করে এবং ব্যবহারকারীর ডিভাইসে ইন্টারনেট সরবরাহ করে।
- যেহেতু স্টারলিংকের স্যাটেলাইটগুলো পুরো পৃথিবীজুড়ে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে, তাই এটি যেকোনো স্থানে ইন্টারনেট সরবরাহ করতে পারে।
- স্টারলিংকের ইন্টারনেটের বড় সুবিধা হলো, এটি প্রচলিত স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের তুলনায় অনেক দ্রুত এবং কম ল্যাটেন্সি (signal delay) প্রদান করে। তাই এটি ভিডিও স্ট্রিমিং, গেমিং, ভিডিও কলিংয়ের মতো কাজেও কার্যকর।
স্টারলিংকের খরচ কত?
স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করতে হলে কিছু নির্দিষ্ট খরচ বহন করতে হয়।
- স্টার্টার কিট: প্রথমবার ব্যবহার করতে হলে স্টারলিংক ডিশ অ্যান্টেনা ও রাউটার কিট কিনতে হয়, যার দাম সাধারণত $৫৯৯ (প্রায় ৭০,০০০+ টাকা) থেকে শুরু হয়।
- মাসিক চার্জ: প্রতি মাসে স্টারলিংক ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য প্রায় $১১০ – $১২০ (প্রায় ১৩,০০০ – ১৫,০০০ টাকা) খরচ পড়তে পারে।
- বিজনেস প্ল্যান: যারা বড় পরিসরে ব্যবহার করতে চান, তাদের জন্য স্টারলিংক কিছু প্রিমিয়াম প্যাকেজ অফার করে, যার দাম আরও বেশি হতে পারে।
বর্তমানে স্টারলিংক মূলত উন্নত দেশগুলোতে চালু রয়েছে। বাংলাদেশে এটি কবে চালু হবে তা স্পষ্ট নয়, তবে ভবিষ্যতে স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের চাহিদা থাকায় এটি আসতে পারে।
উপসংহার
স্টারলিংক এমন একটি প্রযুক্তি যা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে উচ্চগতির ইন্টারনেট প্রদান করে, বিশেষ করে যেসব জায়গায় প্রচলিত ব্রডব্যান্ড বা মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করে না। এটি নিম্ন-কক্ষপথে স্থাপিত হাজার হাজার স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সরবরাহ করে এবং ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষ ধরনের অ্যান্টেনা ও রাউটারের প্রয়োজন হয়।
স্টারলিংকের খরচ তুলনামূলক বেশি হলেও, এটি ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট বিপ্লব ঘটাতে পারে। বাংলাদেশে স্টারলিংক কবে আসবে তা নিশ্চিত নয়, তবে উন্নত প্রযুক্তির এই সেবা ভবিষ্যতে দেশের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

Hi, I’m Sadab Muntasir, a Digital Content & Video Creator. I’m here to share insights, tips, and strategies to help you grow. Let’s start your digital content journey together!
Leave a Reply